প্রচ্ছদ

হজ্জ্ব: তখন এবং এখন

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৯:৩৭

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

hajj-300x187ইসলাম থেকে ডেস্ক: এখন হজ প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। এসেছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। সৌদি আরব সরকার হজযাত্রীদের যথোচিত স্বস্তি দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু অতীতে হজ করা এতটা সহজ ছিল না। খা খা মরুর ভিতর দিয়ে পায়ে হেঁটে, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের ওপর জাহাজে ভাসতে ভাসতে হজযাত্রীরা পৌঁছাতেন সৌদি আরবে। তাতে সময় লেগে যেতো কয়েক মাস। তবু শেষ পর্যন্ত যখন তারা পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছাতেন বুকের ভিতর অন্যরকম এক প্রশান্তি অনুভব করতেন।

এমনই এক কাহিনী বর্ণনা করেছেন তিউনিশিয়ার হজযাত্রী সালাহউদ্দিন আল সাফি। তিনি এখন থেকে ৪৪ বছর আগে ২৫ বছর বয়সে প্রথম হজ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তারপর এবার আবার গিয়েছেন। ৪৪ বছর আগের হজের অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেছেন আরব নিউজের কাছে।

তাতে তিনি বলেছেন কি অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পর তারা সৌদি আরবে পৌঁছাতেন। কখনো মরুভূমির ভিতর তপ্ত বাতাস, গলা শুকিয়ে খা খা। হজযাত্রীরা তার ভিতর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলেছেন। ক্লান্তি পিছনে ফেলে তারা এক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে ছুটে চলেন পাহাড়ি পথ, এবড়ো থেবড়ো মাঠ। বেশ কয়েক মাস এভাবে ছুটতে ছুটতে এক সময় পৌঁছে যেতেন মক্কায়। সমুদ্র পথে যেতেন অনেক হজযাত্রী। তিনি বলেছেন, সেটা ১৯৭০ এর দশকের কথা।

তখন তিউনিশিয়ায় জাহাজ কেবল চালু হয়। সেই সময় ১৯৭২ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম হজে যান। তিনি তিউনিশিয়ার হালক আল ওয়াদি বন্দর থেকে আল হাবিব নামের জাহাজে আরোহন করেন। ওই সময় তিউনিশিয়ার কাছে ওই একটিই জাহাজ ছিল।

ফলে তিউনিশিয়ার মানুষের জন্য হজ করার একটিই মাধ্যম ছিল সমুদ্রপথ। ওই জাহাজে উঠে ধর্মীয় নেতারা ইসলামী বক্তব্য রাখতেন। পবিত্র কাবা, গ্রান্ড মসজিদ ও অন্যান্য পবিত্র স্থানে পৌঁছাতে তাদের সময় লাগতো ১০ দিন। এ সময়ের সদ্ব্যবহার করতেন ধর্মীয় ওই সব নেতা।

তিনি বলেন, জেদ্দা পৌঁছে আল ট্যুর নামক স্থানে হজযাত্রীদের টিকা দেয়া হতো, যাতে তাদের কোন সংক্রামক ব্যাধি না হয়। তাদেরকে তারপর পবিত্র স্থানগুলোতে পাঠানো হতো। এসব স্থান পরিদর্শনে সময় লেগে যেতো ৩ থেকে ১০ দিন। তিনি বলেন, জেদ্দা পৌঁছানোর পর নতুন এক যাত্রা শুরু হতো। সেই যাত্রা মক্কামুখী। সেখানে গিয়ে তাওয়াফ আল কুদুম পালন করা হতো। এক্ষেত্রে প্রথম তারা থামতেন উম আল সালাম নামক একটি স্থানে। সেখানে হজযাত্রীরা নামাজ আদায় করতেন।

ধর্মীয় পরিবেশে তারা বিশ্রাম নিতেন। ওই সময় হজযাত্রীদের জন্য দেয়া সেবা ছিল খুবই সাধারণ। প্রতি জন হজযাত্রীকে তার নিজের খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হতো। যে রাস্তায় হজযাত্রীরা হেঁটে যান সেখানে ছিল বিক্ষিপ্তভাবে অল্প কিছু মুদির দোকান। মক্কাগামী সড়ক তখন ছিল মরুভূমি, অতি সাধারণ ও সংকীর্ণ।

হজযাত্রীরা তাদের আর্থিক অবস্থা বুঝে দলে দলে ভাগ হয়ে যেতেন। কেউ কেউ মক্কা পৌঁছানোর জন্য সাদামাটা গাড়ি ভাড়া নিতেন। অন্যরা বাসে চড়তেন। বাকি যারা থাকতেন তারা যেতেন উটে চড়ে। মিকাতে গিয়ে তারা ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ আল কুদুম সম্পন্ন করতেন। এ সময় পবিত্র কাবাকে চুমু দিতেন।

তারপর তারা সাফার দিকে যেতেন সাফা-মারওয়া সফর করতে। সেখানে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ হজযাত্রীরা কাঠের বক্সে করে দুর্বল হজযাত্রীদের মাথায় তুলে নিতেন। সালাহউদ্দিন আল সাফি বলেন, জিলহজ মাসের ৯ তারিখে হজযাত্রীরা ভারি ভারি লরিতে চড়ে যেতেন ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। সেখানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করতেন। তার ভাষায়, আমাদের লাগেজ তখন গাড়ির ছাড়ে দিয়ে দিতাম।

তারপর গাড়ির ভিতর বসে পড়তাম। আমারদের হৃদয়মন জুড়ে তখন আরাফাতের ময়দান দেখা ও এই পবিত্র ময়দানের মাটি স্পর্শ করার এক উদগ্র বাসনা।

১৯৭০ এর দশকে হজযাত্রীদের থাকা খাওয়ার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে তেন কোন সহযোগিতা করা হতো না। প্রতিজন হজযাত্রীকে তার নিজের তাঁবু তুলে নিতে হতো। একই দেশের হজযাত্রীরা তাদের মতো করে তাঁবু টানিয়ে নিতেন। সেখান থেকে তারা ছুটে যেতেন মুজদালিফা ও পরে মিনায়। বেশির ভাগ সময় হজযাত্রীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করতেন। এখন তাদের এসব যাত্রা সহজ ও স্বস্তির হয়েছে। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। আছে অত্যাধুনিক ট্রেন।

সালাহউদ্দিন আল সাফি বলেন, জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপ করার পর হজযাত্রীরা কসাইখানা যেতেন। সেখানে গিয়ে তারা কোরবানির পশু নির্বাচন করে নিজেরা পশু জবাই প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতেন। জামারার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা যেতেন গ্রান্ড মসজিদে তাওয়াফ করতে।

ওই সময়ে এখনকার মতো করে জমজমের পানি সরবরাহ করা হতো না। তখন হজযাত্রীরা ওই পবিত্র কূপের কাছে গিয়ে নিজেরা পানি পান করতেন। সেখান থেকে হজযাত্রীরা কন্টেইনারে করে নিয়ে যেতেন পানি।

কিন্তু এখন এই ৪৪ বছর পরে সালাহউদ্দিন আল সাফি হজ প্রক্রিয়ায় অনেকটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সৌদি বাদশা আবদুল আজিজ ও তার ছেলেরা নিরাপত্তা ও হজযাত্রীদের স্বস্তির জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে আল্লাহ তাদের ওপর সওয়াব বর্ষণ করবেন।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার