প্রচ্ছদ

সন্ত ঘোষিত হলেন মাদার তেরেসা

০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৫০

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

2016-09-04_3_273598ভ্যাটিকান সিটি, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ (বাসস) : শান্তিতে নোবেল জয়ী ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ইতালির ভ্যাটিকান সিটির সেইন্ট পিটার্স স্কোয়ারে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে পোপ ফ্রান্সিস তাকে সন্ত ঘোষণা করেন।
সাধারণত কোন ব্যক্তির দুটি অলৌকিক ঘটনার বিষয়ে পোপ নিশ্চিত হলে তাকে সন্ত ঘোষণা করা হয়। মাদার তেরেসারও এ ধরনের দুটি ঘটনার বিষয়ে পোপ নিশ্চিত হয়েছিলেন।
আলবানিয়ায় ১৯১০ সালের ২৫ আগস্ট জন্ম নেয়া আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিও ‘নান’ হন ১৯২৮ সালে। তখন তার নাম হয় সিস্টার তেরেসা। ১৯৩৭ সালের ২৪ মে তেরেসা ‘মাদার’ হন। আজ রোববার সন্ত ঘোষণার পর তিনি হলেন ‘সন্ত’ তেরেসা। এরপর তাঁর নামে ‘হোলি মাস’ হতে পারবে। চার্চ নামাঙ্কিত হতে পারবে তেরেসার নামে এবং ছবিতে তাঁর মাথার পিছনে ‘হেলো’ বা জ্যোতির্বলয় থাকতে পারবে।
মাদার তেরেসা ১৯৫০ সালে কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি গরীব, অসুস্থ, অনাথ, অসহায় ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও নিবিড় পরিশ্রম করেছেন।
প্রথমে ভারত ও পরে পুরো বিশ্বে তিনি তাঁর এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে দেন।
১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তাঁর খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যালকম মাগারিজের বই ও প্রামাণ্য তথ্যচিত্র সামথিং বিউটিফুল ফর গড তাঁর সেবাকাজের প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তাঁর সেবাকাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরতœ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসার মৃত্যুকালে বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
সন্ত ঘোষণা করার আগে কয়েকটি ধাপে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। মাদার তেরেসার ক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সন্ত হওয়ার যোগ্য কোনও ব্যক্তির সন্তায়নের প্রক্রিয়াটি সাধারণত শুরু হয় তাঁর মৃত্যুর অন্তত পাঁচ বছর পরে। কিন্তু মাদার তেরেসার ক্ষেত্রে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই নিয়ম শিথিল করেন। মাদার তেরেসা মারা যান ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জন পোপ ১৯৯৯ সালে তাঁর সন্তায়নের পদ্ধতি শুরু করার অনুমতি দেন। এক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপে এগুতে হয়।
প্রথমে ভক্তরা একটি ডায়োসেস-এর (ক্যাথলিক চার্চের স্থানীয় প্রশাসন) বিশপের কাছে আবেদন জানান যে, ওই ব্যক্তি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁকে সন্ত করার কথা বিবেচনা করা হোক। বিশপ অনুমতি দিলে সেই ব্যক্তির লেখাপত্র, বক্তৃতা, উপদেশ ইত্যাদি সন্ধান করে একটি বিশদ জীবনী লেখা হয় এবং তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার সাক্ষীদের বয়ান সংগ্রহ করা হয়। এই পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে বলা হয় ‘সারভ্যান্ট অব গড’ বা ঈশ্বরের সেবক।
এরপর সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয় এক জন ‘পস্ট্যুলেটর’-এর কাছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ‘ঈশ্বরের সেবক’ সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করে সব কিছু বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে সন্তায়ন প্রক্রিয়ার একটা ‘পস্ট্যুলেট’ বা প্রাথমিক ভিত তৈরি করেন।
পস্ট্যুলেট-এর ভিত্তিতে পোপের কাছে সুপারিশ করা হয় তিনি যেন ঈশ্বরের সেবক-এর মহিমার কথা ঘোষণা করেন। পোপ সেই ঘোষণা করলে ঈশ্বরের সেবক ‘ভেনারেবল’ বা মহিমময় আখ্যায় পরিচিত হন।
একটি বৈজ্ঞানিক কমিশন এবং একটি থিয়োলজিকাল কমিশন ‘ভেনারেবল’ মানুষটির সম্পাদিত অন্তত একটি ‘মিরাক্ল’ বা অলৌকিক কীর্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করে সেটিকে অলৌকিক বলে স্বীকার করলে পোপের কাছে সেই সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়। পোপ যদি মনে করেন, এ সবই সত্যি, তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘বিয়েটিফিকেশন’ ঘোষণা করেন। এর অর্থ: চার্চ এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করে ওই ব্যক্তির পাপমুক্তি হয়েছে। তিনি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে স্বর্গে প্রবেশ করেছেন।
এই পদ্ধতিতে সন্তায়নের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং এক্ষেত্রে পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণার জন্যে যে দুটি অলৌকিক ঘটনা পোপ অনুমোদন করেন তার একটি ঘটেছে ভারতে। ১৯৯৮ সালে দেশটির দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের নাকোড় গ্রামের মনিকা বেসরার ওভারির ক্যান্সার মাদার তেরেসার আর্শিবাদে সেরে যায়। ভ্যাটিকান ২০০২ সালে এটি অনুমোদন করে।
অপর ঘটনাটি ব্রাজিলের এক ব্যক্তির। তার মাথায় একাধিক টিউমার হয়েছিল, তিনি আশ্চর্যজনকভাবে সেরে উঠেছেন। আর তার এই সেরে উঠাকে মাদার তেরেসার আশীর্বাদ বলেই নিশ্চিত হয়েছে ভ্যাটিকান।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার