অবশেষে শুরু হচ্ছে সিলেট-চারখাই-শেওলা সড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১৭
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে শুরু হচ্ছে সিলেট-চারখাই-শেওলা সড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ। গত মঙ্গল ও বুধবার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
এই দুই দিনে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন এবং শেওলা ইউনিয়নে চারলেন প্রকল্পের জন্য জরিপ কাজ পরিচালনা করে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেন। এ সময় প্রকৃত জায়গার মালিকের কাছ থেকে জমির প্রয়োজনীয় কাগজ যাচাই-বাছাই করে সেগুলোকে চারলেন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করেন এবং জমির মালিকদের সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন।
জমির মালিকরা সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশ্বাসে সেগুলো স্বইচ্ছায় ছেড়ে দিতে রাজি হন। এর আগে জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটিকে বাতিল করার সুপারিশ করেন সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক শের এ মাহবুব মুরাদ। বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হলে সিলেটের পূর্বাঞ্চল জুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সিলেটস্থ বিয়ানীবাজার জনকল্যান সমিতি বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। পৃথক স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রতিবাদ শুরু হয়।
এমন অবস্থায় বিষয়টি পূনর্বিবেচনার আশ্বাস দেন বর্তমান জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম। এর প্রেক্ষিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে চারলেন প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করেন। প্রকল্পটি শুরু করতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ তদবির করেন।
জানা যায়, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলমের প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের জোর দাবীর প্রেক্ষিতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হওয়ায় পূর্ব সিলেটের ৪টি উপজেলার জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল একনেক বৈঠকে অনুমোদিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
জানা যায়, সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত সহজ করতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেটের চার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১ হাজার ৩৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। প্রকল্পে বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মুহাম্মদ জয়নুল ইসলাম বলেন, শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বিশেষ করে পাথর, সিমেন্ট, ফলমূল, এবং প্রাণ-সজীব গ্রুপের পণ্য আদান-প্রদান চলে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ভারী ট্রাক এই পথে চলাচল করে। কিন্তু জীর্ণ শেওলা সেতুর কারণে যানবাহন প্রায়ই আটকে পড়ে। নতুন চার লেন সড়ক নির্মিত হলে ব্যবসা আরও বেগবান হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত দ্রুত ও সহজ হবে। এ ছাড়া, বিবিআইএন করিডোর, সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর, বিসিআইএম করিডোর, সার্ক করিডোরের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বাড়বে, ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। প্রকল্পে ২৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, প্রায় ৪৩ কিলোমিটার চার লেন সড়ক, দুটি সার্ভিস লেন, এক হাজার ৫৭৫ জন পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, তিনটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, চারটি ফুটওভারব্রিজ, সাতটি পায়ে চলার রাস্তা ও একটি টোল প্লাজা নির্মাণের কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশু বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের মানুষের দূর্ভোগ কমবে। পাশাপাশি আমদানি এবং রপ্তানিতে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। ব্যাবসায়ীদের মালামাল পরিবহনের খরচ কমবে। আমার আলীনগর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মঙ্গল এবং বুধবার জমি অধি:গ্রহণের কাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য ইউনিয়ন এলাকায় হয়ে সিলেট বাইপাস পর্যন্ত যাবে। এলাকার মানুষ আন্তরিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজে সহযোগিতা করেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেট যাতায়াতের অন্যতম এই সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাছাড়া ব্যাস্ততম এই সড়ক দিয়ে শেওলা স্থলবন্দরে পন্য সামগ্রি পরিবহন করা হয়। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে আমি ব্যাক্তিগতভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয় এর সাথে একাধিকবার কথা বলেছি যাতে পুনরায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসক আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই কাজ শুরু করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হয়েছে, বাকি কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম বলেন, আমি সিলেট আসার পর থেকে চারলেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং স্থানীয়রা স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেন। আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলাম এই প্রকল্প যাতে পুনরায় শুরু হয়ে আমি সেই চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আনন্দের বিষয় হচ্ছে সরকারের আন্তরিকতা আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যান্য কাজ শুরু হবে।


